কয়েক দফায় পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদার। সবশেষ কাজ ফেলে পালিয়েছে তারা। এতে দীর্ঘ আট বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণ কাজ। ফলে শেষ হয়নি বৃদ্ধ, নারী-শিশু, শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষের ভোগান্তি। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। তবে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ২২২ মিটার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। যার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা ইন্সট্রাকশন। কিছুটা কাজের অগ্রগতি শেষে ব্রিজের নকশা জটিলতা এবং সময়ক্ষেপণ হওয়ায় ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন শেষে কাজ করা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
পুনরায় ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা চুক্তিমূল্য ধরে সেতুটির নির্মাণের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয় কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানকে। সেই প্রতিষ্ঠান সেতুটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিল নিয়ে ৫ আগস্টের পরে পালিয়ে যায়। এতেই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়ার বড় একটি এলাকা সেতুটির পশ্চিম পাশে অবস্থিত। আর নড়িয়া শহরটির মূলকেন্দ্র পূর্ব পাশে হওয়ায় স্কুল-কলেজ, বাজারসহ সব কাজে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে পাড়ি দিতে হয় কীর্তিনাশা নদী। এছাড়া নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের মানুষকে ঢাকায় যেতে এই নদী পাড় হয়ে ওপার থেকে বাসে উঠতে হয়। এতে করে তাদের ভোগান্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক গুন। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনে বেগ পেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
নদী পাড় হয়ে প্রতিদিন পূর্ব পাশে নড়িয়া বিহারী লাল উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রওজা। সে বলে, নৌকায় পাড় হয়ে স্কুল যেতে ভয় হয়। মাঝে মধ্যে ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর বর্ষার সময় বৃষ্টিতে ভিজে যায় বই-খাতা। অনেক দিন ধরে সেতু না হওয়ায় আমরা সমস্যায় পড়েছি।নড়িয়া বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী হুমায়ুন বলেন, একটা সময় জমজমাট ছিল এই বাজার। তখন বাসে করেই ঢাকা থেকে মালামাল নিয়ে আসতাম। নতুন সেতু তৈরির জন্য পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলার পর বাজারে এখন তেমন ক্রেতা আসে না। এছাড়া শরীয়তপুর শহর ঘুরে আমাদের মালামাল আনতে হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় উপক্রম হবে।
ঢাকাগামী যাত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা নামের এক নারী বলেন, শিশু বাচ্চাকে কোলে করে আবার অন্য হাতে ব্যাগ নিয়ে ট্রলারে করে নদী পাড় হয়ে বাসে উঠতে হয়। আগের পুরান সেতু দিয়ে অটোরিকশা চলাচল করলেও ভেঙে ফেলার পর এখন এই ট্রলারই ভরসা। এছাড়া নদীতে অনেক বালুবাহী নৌকা চলাচল করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজটি চালু করা হোক।বাসচালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আগে আমরা গাড়ি নিয়ে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে পারতাম। এখন সেতু না থাকায় পশ্চিমপাড় থেকে যাত্রী উঠাতে হয়। এতে আমাদের ভাড়ার পরিমাণও কমে গেছে। এই অঞ্চলে মানুষের যাতায়াতের সুবিধা জন্য এবং আমাদের বাস চলাচলের সুবিধার জন্য দ্রুত সেতু চালুর দাবি জানাই।
এদিকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সেতুর বাকি কাজ শেষ করার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন শরীয়তপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই দফায় ব্রিজের ঠিকাদার পরিবর্তন করতে হয়েছে। সবশেষ ঠিকাদার ৫ আগস্টের পর পালিয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগ শেষে ব্রিজের বাকি কাজ করতে হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন